শেয়ারবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে

Passenger Voice    |    ১১:২৯ এএম, ২০২৪-০৩-০৭


শেয়ারবাজারে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে

ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ নামে এক ব্রোকারেজ হাউস চেয়েছিল সাউথইস্ট ব্যাংক তাদের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করুক। সম্প্রতি এই তহবিল চেয়ে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করেছিল।  সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদের একটি পক্ষের আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি। যদিও আরেকটি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আসছে। এ নিয়ে পর্ষদের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়টি জানতে পেরে ইউনাটেড সিকিউরিটিজের অনুকূলে অর্থ ছাড় বা শেয়ার কেনা আটকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে সাউথইস্টের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শন চলছে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাংকটির নিজস্ব মার্চেন্ট ব্যাংক থাকার পরও কেন সরাসরি অন্য ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার বেচাকেনা করে আসছে, তা  খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগে নিয়মকানুন মানা হয়েছে কিনা, ব্যাংকের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে পরিচালক বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন কিনা, কয়েক বছর আগে ইএম পাওয়ার নামে কোম্পানির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের সাড়ে ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক বিনিয়োগ এবং পরবর্তী সময়ে তা সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিদর্শন চলছে। পুরো পরিদর্শন শেষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বরাবর একটি প্রতিবেদন দেবে তদন্ত দল। সে আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সাউথইস্ট ব্যাংকের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন চলছে। পরিদর্শনে যা পাওয়া যাবে, তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের সঙ্গে আগাম সমঝোতার ভিত্তিতে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ গত ২৩ জানুয়ারি ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল চেয়ে আবেদন করে। ব্রোকারেজ হাউসটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাজীব আল মামুনের স্বাক্ষরে আবেদনটি করা হয় ব্যাংকের এমডি বরাবর। আবেদনে সাউথইস্ট ব্যাংককে ‘প্রিমিয়াম ক্লায়েন্ট’ হিসেবে প্রতি ১০০ টাকার শেয়ার কেনাবেচার জন্য সব ধরনের খরচসহ মাত্র ২৫ পয়সা হারে বিশেষ ব্রোকারেজ কমিশন চার্জ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এর পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় প্রস্তাবটি উঠলে তা অনুমোদিত হয়। যদিও সেখানে কোনো টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন হয়। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ একটি পক্ষ চেয়েছে, এখন থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের অধিকাংশই পরিচালিত হবে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের মাধ্যমে। বর্তমানে অন্য কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ হচ্ছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের স্বার্থের দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ আসে। এর পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়ে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের অনুকূলে কোনো অর্থ ছাড় না করা এবং কোনো শেয়ার না কেনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ওই দিন থেকে বিশেষ একটি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শুরুতে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, দেখা হচ্ছিল। তবে এখন তা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসাইনের ব্যক্তিগত টেলিফোনে কল করে এবং এসএমএস করে সাড়া পাওয়া যায়নি। 

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আলমগীর কবিরের আধিপত্যে পরিচালিত হয়ে আসছে সাউথইস্ট ব্যাংক। মাঝে ব্যাংকটিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন পদ্মা ব্যাংক থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত। তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ সিঙ্গেল ক্লিক আইটি সলিউশনের পক্ষে ২০২২ সালের জুন থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক। 

সাউথইস্টে এবারই প্রথম শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তেমন নয়। এর আগে ২০১৮ সালে ইএম পাওয়ার নামে একটি কোম্পানিতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে সাড়ে ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক বিনিয়োগ করে ব্যাংক। এ বিনিয়োগ নিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে আপত্তি দেওয়া হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইএম পাওয়ারের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চাইলেও তা দিতে পারেনি সাউথইস্ট ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো সাড়ে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ ‘কলব্যাক’ তথা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিংসহ সন্দেহজনক বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ। সংস্থাটি তদন্ত করে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পায়। এর পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তখন দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় বিএফআইইউ। 


প্যা/ভ/ম